Madhabdi Sati Prasanna Institute
মাধবদী এস, পি ইনস্টিটিউশন এর সার্বিক উন্নয়নে তাঁর অবদান

মাধবদী এস, পি ইনস্টিটিউশন এর সার্বিক উন্নয়নে তাঁর অবদান

আগেই বলা হয়েছে শিক্ষার প্রতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর প্রবল টানের কথা তাই সরকারি চাকরিরত অবস্থায় থেকেও সাধারণ মানুষ যাতে করে সহজে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। আর সে জন্যই নিজ এলাকাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে যৌবনকাল থেকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কঠোর পরিশ্রম করে মাধবদী এস. পি. (সতীপ্রসন্ন) ইনস্টিটিউশনকে একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছেন।

আদি কথা মাধবদী এস.পি (সতী প্রসন্ন) ইনস্টিটিউশন ঃ

অত্র এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার এক মহান উদ্দেশ্যে মাধবদীর জমিদার প্রয়াত সতী প্রসন্ন গুপ্ত রায়ের পত্নী স্বর্ণময়ী গুপ্তা রায় ১৯২১ সালে মাধবদী বাজারের ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে যা পাতিল পট্টি নামে পরিচিত (বর্তমান রুকন উদ্দীন মোল্লা মার্কেটের স্থান) ২২ শতাংশ ভূমির উপর একটি মাইনর ইংলিশ স্কুল (এম.ই. স্কুল) প্রতিষ্ঠা করবেন। শিক্ষামান ছিল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে জমিদার সতী প্রসন্ন গুপ্ত রায়ের নামানুারে এটি হাই স্কুলে উন্নীত হয়। ভারতীয় উপ-মহাদেশে বৃটিশ উপনেবিশিক শাসন অবসানের মাত্র ১মাস ১২ দিন পূর্বে অর্থাৎ ০৩-০৭-১৯৪৭ সালে ক্যালকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাধবদী এস.পি-ইনস্টিটিউশন নামে হাই স্কুল হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে। প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রীযুক্ত বাবু বঙ্কিম চন্দ্ৰ দত্ত। ১৯৫৮ সালের দিকে মাধবদী বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় এবং স্কুলের স্থানটি ছাত্র সংখ্যার তুলনায় সংকীর্ণ হওয়ায় তৎকালীন প্রধান শিক্ষক দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র আঢ্য ও স্কুল পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারী বাবু পরিতোষ গুপ্তকে জনাব ফজলুল করিম সহকারী শিক্ষক মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউশন স্কুলটি পাতিল পট্টির সংকীর্ণ পরিসর থেকে বৃহৎ পরিসরে স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন। কিন্তু এটি হাই স্কুলের জন্য বৃহৎ পরিসরে জমি পাওয়া ছিল দুষ্কর ও অসাধ্য ব্যাপার। জনাব ফজলুল করিম এই অসাধ্য ব্যাপারটি নিজের কাঁধে তুলে নেন এবং নিজ গ্রাম বিরামপুর মৌজায় ভুলটি স্থাপনের সফল প্রয়াস চালান। ১৯৫২ সালে স্কুলটি বিরামপুর মৌজায় নিজস্ব অর্থায়নে জন্য করা জমির উপর স্থানান্তরিত হয়। একই সালে জমিদারদের দানকৃত সম্পত্তিতে স্কুলটি না থাকায় স্কুলটির নামককরণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে মোঃ ফজলুল করিম মাস্টার এর মধ্যস্থতায় নাম অপরিবর্তিত রাখার লক্ষ্যে জমিদারদের এস্টেট ম্যানেজার বাবু জগৎ চন্দ্র দাস। স্কুলের ছেড়ে দেওয়া ২২ শতাংশ জমির পরিবর্তে একই মৌজার (ছোট গদাইরচর) সাবেক ৭৪ বর্তমান ৪১০ ও ৪১১ দাগের নিচু ও নিম্নমানের ১০৭ শতাংশ জমি দান করেন। ফজলুল করিম মাস্টারের সুদূর প্রসারী ভাবনা ও প্রজ্ঞার কারণে স্কুলটির অবকাঠামো ও ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফজলুল করিম সাহেবের প্রচেষ্টায় এক এক করে জমির মালিক দাতাদের কাছ থেকে জমি গ্রহণ করার ফলে এই বিশাল আয়তনের বিদ্যাপীঠ আজ সকলের পরিচিত ও সমাদৃত। স্কুলটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরের ব্যাপারে তাকে যারা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন শ্রদ্ধার সাথে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হলোঃ

১। বাবু হরিতোষ গুপ্ত

২। ডাঃ মাহাবুব আলী ভূঁইয়া

৩। আজগর আলী ভূইয়া

৪। সাদেরকুর রহমান ভূঁইয়া ৫। জমসের আলী মোল্লা

৬। বাবু জগৎ চন্দ্ৰ দাস

১৯৭৩ সালে তিনি যখন স্কুলের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বড় মাঠের পূর্ব প্রান্তে মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা একটি একতলা বিল্ডিং ছিল যা প্রধান শিক্ষকের অফিস, শিক্ষক মিলনায়তন ও কায়েকটি শ্রেণিকক্ষ ছিল। ছোট মাঠের উত্তর প্রান্তে ১টি জরাজীর্ণ টিনের ঘর শ্রেণিকক্ষ হিসাবে ব্যবহৃত হত। এই টিনের ঘরের উত্তর প্রান্ত থেকে মাটি কেটে ঘরের ভিট উঁচু করা হয়, ফলে উত্তর প্রান্তটি একটি জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। তিনি বড় মাঠের পূর্ব প্রান্তের বিল্ডিংটি স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে সম্প্রসারণ করে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে

যান এবং প্রধান শিক্ষকের অফিস স্থানান্তর এবং শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি করেন। ১৯৭৮ সালে সরকারি সহায়তায় ছোট মাঠের দক্ষিণপ্রান্তে একটি আধাপাকা টিনসেট বিল্ডিং স্থাপনে সক্ষম হন। উত্তর পাশের টিনের ঘরটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সামর্থের অভাবে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছিল না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি 'এসো কাজ করি সমাজ গড়ি' প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উত্তরাংশের ডোবাটি বাস- রিক ভাড়ার ভিত্তিতে মার্কেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেন এবং স্কুলের জন্য এক সাথে দশ লক্ষ টাকার সংস্থান করেন। যা দিয়ে ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে স্কুলের পূর্ব ভিটির চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০০ সালে বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ সমাপান্তে উদ্বোধন করা হয়। ২০০০ সালে স্কুলের উত্তর প্রান্তে পূর্ববর্তী জরাজীর্ণ টিনের ঘরের স্থানে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক একতলা বিল্ডিং এবং উত্তর ভিটিতে আরো একটি একতলা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিম বিল্ডিং এর উপরে একতলা নির্মাণ করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্র তৎকালীন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সিটি ব্যাংকের ডি.এম.ডি মোঃ হাবিবুর রহমান এর সহায়তায়। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিম মোঃ হাবিবুর রহমান এর সহায়তায়। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিম বিল্ডিংয়ের উপরে আরো একতলা এবং উত্তর বিল্ডিং এর উপরে আরো দুইতলা স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন যা তাঁর সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফসল।

সুপ্রিয় পাঠক মাধবদী এস.পি. ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় জনাব ফজলুল কারিম ছিলেন অনুপস্থিত কিন্তু প্রকৃত স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। স্কুলের জন্য ভূমি সংগ্রহ থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মানন্নোয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নোয়ন, শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অন্তপ্রাণ একজন মানুষ। জনাব ফজলুল করিম অন্তর থেকেই চাইতেন মাধবদী এস.পি, স্কুলের উন্নয়ন। তাই তিনি দক্ষ নেতৃত্ব খোজতেন সবসময়, কার দ্বারা স্কুলের অধিক উন্নয়ন হবে তা ছিল তাঁর চিন্তা-চেতনায়। তাই তিনি স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৩ সালে প্রথম মাধবদী এস, পি ইনস্টিটিশনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে ও ১৯৭৭ সালে তিনি স্কুলের সভাপতি হিসেবে নিয়ে আসেন আলগী গ্রামের কৃতি সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ সচিব জনাব খাদেম আলী সাহেবেকে। উক্ত কমিটিতে জনাব ফজলুল করিম, সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি ০৭-১০-৭৩ সাল থেকে ০৩-১২-০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৩ বছর বিরামহীনভাবে একটি কমিটিতে সভাপতি এবং ১০টি কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।